
প্রত্যাখ্যাত আর ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা তার অসংখ্য। পথচলায় জীবন মোড় নিয়েছে বারবার। কিন্তু বর্তমানে তিনি ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডেভলপার হিসেবে সফল একজন। ভার্চুয়াল জগতে সবাই চেনে মেষ তাডুয়া নামে। ওয়েব ডিজাইন শেখা শুরুর দিকে ফ্রিতে ওয়েব সাইট বানিয়ে দিতেন। এই এম আর জান্নাত স্বপন কি ভাবে পরিচিত হলেন আসুন তার মুখেই শোনা যাক।
আমি এম আর জান্নাত স্বপন। মেশ তাড়ুয়া নামেই অনলাইনে বেশি পরিচিত । ২০০৩ সাল থেকে গাজীপুরে টেক্সটাইল মিলে চাকুরী করি। শখের ওয়েব ডিজাইনার। মূলত কাজ করি ওয়ার্ডপ্রেস ও জুমলা প্লাটফরমে। বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুরে। এক সময় লেখা পড়া থেমে যায়। সেই তখন থেকে একা পথ চলতে শেখা। অনেক পরে, স্ব-শিক্ষিত হওয়ার লক্ষে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করি এবং সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করলাম। এর মধ্যে চেষ্টায় আর পরিশ্রম করে বাংলাদেশ তায়কোয়ানডো ফেডারেশন থেকে পেয়েছি মার্শাল আর্ট এ ব্ল্যাক বেল্ট। বাকি সময়টুকু পড়াশোনা আর শখের ওয়েব ডিজাইনের কাজ শুরু করি। শিখতে থাকি এইচটিএমএল, সিএসএস, পিএইচপি, ওয়ার্ডপ্রেস ও জুমলা। ধীরে ধীরে, যা কাজে লাগিয়ে ই-কমার্স, পোর্টাল, সামাজিক নেটওয়ার্ক, সংবাদপত্র, পোর্টফোলিও, ফোরাম সহ প্রায় সব ধরনের ওয়েবসাইট তৈরিতে অভিজ্ঞতা হয়ে যায়।
এক সময় শিশু সাংবাদিক ও ছিলাম। লিখতাম সাপ্তাহিক কলমজমিন, দৈনিক কুড়িগ্রাম খবর সহ সে সময় ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মাতৃভূমিতে। এখন আর কাগুজে পত্রিকায় লেখা হয় না। আমার সম্পাদনায় অনলাইন কমিনিউনিটি নির্ভর https://www.kurigramlive.com/ নামে একটা নিউজ পোর্টাল ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়, লিখতে হয় সেখানেও। এই ছিল আমার পরিচয়।
ওয়েব ডিজাইন এর কাজ শিখলাম যেভাবে –
কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেনিং নিয়ে ওয়েব ডিজাইন এর কাজ শিখিনি। যা শিখেছি তা সবই ইন্টারনেট থেকে ইংলিশ আর বাংলা টিউটোরিয়াল দেখে। গুগোল, ইউটিউব এর বড় অবদান আছে এতে। চাকরির ফাঁকে এক সময় সাইবার ক্যাফে থেকে ওয়েব ডিজাইন এর কাজ শিখতে প্রতি ঘণ্টায় ৩০ টাকা দিয়ে দিনে গড়ে প্রায় ৫ ঘণ্টা নেট ব্রাউজ করতাম। সে সময় প্রতিদিন বিল আসতো ১৫০ টাকারও বেশী। যেটা আমার জন্য মোটেও সুখের ছিলনা। সাইবার ক্যাফে থেকে কাজ তেমন না শিখতে পারলেও শুধুমাত্র সাইবার ক্যাফেতে বসে ৩০টিরও বেশি ওয়েবসাইট ডিজাইন করেছি। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও অসম্ভব ইচ্ছে শক্তি থাকায় তেমন কোন সমস্যা হয়নি। হাতে নেয়া সব প্রোজেক্ট’ই সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, আরডিজেএ’র ওয়েবসাইট http://www.rdja.net/ যেখান থেকে আমাদের সংগঠনের অধিকাংশ কাজ পরিচালিত হয় সেটিও প্রথম সাইবার ক্যাফে থেকে ডিজাইন করা হয়েছিল।
ঠেলাগাড়ি চালানো থেকে প্রোগ্রামিং, সব কাজেই দরকার একাগ্রতা, নিষ্ঠা এর কাজের প্রতি ভালবাসা। হয়তো কাজের প্রতি আমার এই ভালবাসা ও একাগ্রতা দেখেই গত বছর নৌবিহারে আরডিজেএ’র সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি নোটবুক উপহার পাই। এই একটা নোটবুক পাল্টে দিয়েছে আমার ভবিষ্যৎ। এসেছে ওয়েব ডিজাইনের কাজ শেখার গতি। উপহারের এই নোটবুকটিই এখন আমার কাজ শেখার একমাত্র সম্বল। সার্বিকভাবে সহায়তা করার জন্যে সংগঠনের কাছে আমি চিরঋণী। এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যই হয়তো এই লেখা কিংবা হয়তো মনের তাগিদ থেকেই লিখছি।
আমার লিখতে ভাল লাগে প্রোগ্রামিং কোড। আসলে আমার প্রোগ্রামগুলো আমার কাছে যেন আমার লেখা কবিতা। আমার দিন, রাত, স্বপ্ন আমার পৃথিবী সবকিছু এসে মিশে একাকার হয়ে গেছে আমার কম্পিউটারে, আমার লেখা প্রোগ্রামে। আসলে আমার জীবনে আমি অনেক কিছু হারিয়েছে শুধু এর পেছনে সময় দিতে যেয়ে। আরো কিছু যদি আমাকে হাড়াতেও হয় তবুও আমার আপত্তি নেই শুধু আমি আমার এই জগৎটি নিয়েই থাকতে চাই। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষটাই প্রথম ঘুরে দাড়ায়। সমুদ্রে একা ডুবতে যাওয়া মানুষটাই জানে তীরে ফেরার ব্যাকুলতা! আমি হতাশ নই, সংগ্রামী হয়ে আমার প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই।
এখন প্রচণ্ড গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। গত এক বছরে জীবনের আমূল পরিবর্তন করে ফেলেছি। আগামী এক বছরেও আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাব। এই যুদ্ধে আমাকে জয়ী হতেই হবে। কারণ আমি পরিশ্রম করতে জানি, করেই যাচ্ছি।
নিজের প্রতিটি মুহুর্তকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করছি। টেক্সটাইলে এ চাকরি আর পড়াশুনার পাশাপাশি পেশাদার ফ্রিল্যান্সিং করছি ওডেস্ক’এ। চলছি নিজের মতো করেই। আমার বাধাহীন জীবন, এই তো আমার জগত।
প্রকাশিত: জিনিয়াস ব্লগ