তাসকিনা ইয়াসমিন : রাজধানীর কলেরা প্রবণ ৬ এলাকায় টিকাদান কার্যক্রমের মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ছিল শেষ দিন। এদিন অনেক স্পটে সকালেই টিকা শেষ হয়ে যায়। যার ফলে, অনেকেই টিকাকেন্দ্রে গিয়ে বিফল মনে ফিরে আসেন।
রাজধানীর লালবাগ এলাকার বাসিন্দা নিশি আক্তার জানান, সকালে তিনি ছেলে আলিফ, বোন নিমা এবং সাদিয়াকে নিয়ে আজিমপুর দায়রা শরীফ এলাকার টিকাকেন্দ্রে যান। সেখানকার লোকজন জানায়, আজ এখানে টিকা দেয়া হচ্ছেনা। আজ ভাট মসজিদ এলাকায় যেতে হবে।
নিশি আক্তার জানান, ভাট মসজিদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টিকা কেন্দ্রের কর্মীরা বসে আছেন। তারা জানান, টিকা সকালেই শেষ হয়ে গেছে। এরপর তারা লালবাগ কেল্লার কাছে গিয়ে কেন্দ্র খুঁজে বিফল হয়েছেন।
নিশি আক্তার বলেন, আমি আর নিমা আপু টিকা খেতে পারিনি এরজন্য মন খারাপ লাগছে না। কিন্তু সাদিয়া আর আলিফ দুজনে ছোট তাদের দুজনকে অন্তত খাওয়াতে পারলে ভাল লাগত।
আজিমপুরের আরেক বাসিন্দা মাকসুদা বেগম জানান, আমি প্রথম দিনেই যখন মাইকিং শুনেছি টিকা কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিয়েছি। আমার ছোট ছেলে সঙ্গে গেছে। মেয়ে আর বড় ছেলেকে নিয়ে যেতে পারিনি। আজ তারা কেন্দ্রে গিয়ে টিকা না খেয়ে ঘুরে এসেছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সরকার ফ্রি ওষুধ দিয়েছে। আমাদের ভাল’র জন্য। আমার পোলা-মাইয়া যদি না বুঝে তো আমি করব! তিনি ওষুধ শেষ হয়ে যাবার জন্য নয়, সন্তানরা দেরিতে যাবার কারণে এই ওষুধ পায়নি বলে আফসোস করেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা এবং দি প্রবাসী’র বিশেষ প্রতিনিধি এম আর জান্নাত স্বপন বলেন, আমি মোহাম্মদপুরের টিকাকেন্দ্র থেকে টিকা খেয়েছি। কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। উৎসব মুখর পরিবেশে। মানুষ খুব আনন্দের সাথে খুব মজা করে এই টিকা খাচ্ছিল কারন এটা খেতে খুব ই সুসাধু আর মিষ্টি দই এর মতো খেতে।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় ঢাকায় ডায়রিয়া কিংবা কলেরা মহামারী আকার ধারন করতে পারে করোনা ভাইরাসের মতো। তাই, বিশেষ সতর্কতা হিসেবে ঢাকায় যারা বাস করেন তাদের সবাইকেই সরকারের পক্ষে থেকে এই টিকা দেয়া উচিত।
যারা প্রথম ডোজ টিকা খেয়েছেন তাদের পরবর্তী ডোজ দেয়া হবে এক মাস পর। টিকা শেষ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ৬টি এলাকায় মোট ১২ লাখ নাগরিকের জন্য এই টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোট পরিসংখ্যানের চেয়ে জনসংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় কিছু ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যারা এবার টিকা পাননি তারা একমাস পরের পরবর্তী ডোজে টিকা নিতে পারবেন।
এর আগে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানীর কলেরাপ্রবণ ৬টি এলাকায় টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে । এরমধ্যে সবচেয়ে কলেরা প্রবণ এলাকা হলো মোহাম্মদপুর। এছাড়া এই তালিকায় রয়েছে আদাবর, দারুস সালাম, কামরাঙ্গীর চর, হাজারীবাগ ও লালবাগ। এই ৬টি এলাকার ১৬টি ওয়ার্ডে ১৯ থেকে ২৫ ফেব্র“য়ারি ১২ লাখ ডোজ টিকা খাওয়ানো হবে। এক বছরের বেশি বয়সী যে কেউ মুখে খাওয়া এই টিকা নিতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইসিডিডিআর’বি পরিচালিত এক জরিপে দেখাগেছে, বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে কলেরার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। ডায়রিয়াজনিত রোগের মধ্যে ২০ শতাংশই কলেরার জীবাণুবাহী।
কলোর সংক্রান্ত আইসিডিডিআরবি’র সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরে ড. কাদরি বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যারা মহাখালী কলেরা হাসপাতালে আসেন তাদের মধ্যে মোহাম্মদপুর এলাকার রোগীদের কলোরা প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এদের মধ্যে প্রতি হাজার রোগীর কলেরায় আক্রান্তের হার ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া আদাবর এলাকায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ, দারুস সালাম এলাকার দশমিক ৩ শতাংশ, লালবাগ এলাকার ২ দশমিক ১ শতাংশ, কামরাঙ্গীরচর এলাকার ১ দশমিক ৫ শতাংশ, হাজারীবাগ এলাকার ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ৩০ সালের মধ্যে দেশকে কলেরা মুক্ত করতে হবে। সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতেই এই টিকাদান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত এই টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা করছে গ্যাভি। আপাতত রাজধানীর ছয়টি এলাকায় এই কার্যক্রম শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলেও জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার ৪৭টি দেশে কলেরার সংক্রমন ঘটে। প্রতিবছর পৃথিবীতে এক দশমিক ৩ মিলিয়ন থেকে এক দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশসহ মোট আটটি দেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ মানুষ এ রোগের শিকার হয়ে থাকে।
দেশকে কলেরামুক্ত করতে এক মাস পরে টিকার দ্বিতীয় ডোজ খাওয়ানো হবে। সিটি করপোরেশনের স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রসহ ৩৬০ টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই টিকা দেয়া হবে।
# সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, লাল সবুজের কথা ডটকম।