এম আর জান্নাত স্বপন
এম আর জান্নাত স্বপন

তাঁর পুরো নাম, এম আর জান্নাত স্বপন। তবে তিনি, অনলাইন জগতের মানুষের মধ্যে, মেষ তাড়ুয়া নামে পরিচিত।  নিতান্ত শখের বসে, ওয়েবসাইট বানানো শুরু করলেও, এখন তিনি প্রতিষ্ঠিত, ওয়েবসাইট ডেভেলপার। দেশি-বিদেশি অনেক সাইটই বানিয়েছেন তিনি। এমনকি বেশ কিছু নিউজ পেপরেরও ডিজাইনার। যেসব তরুণ আইটি খাতে ক্যারিয়ার তৈরী করতে চান, তাদের জন্য তিনি উজ্জ্বল নক্ষত্র।

একান্তে কথা হয় তাঁর সাথে। শত ব্যস্ততার মধ্যে জানিয়েছেন, তাঁর ভালো-মন্দ লাগা, ব্যক্তিগত অনেক কিছু।  তিনি জানান,  ভাললাগে বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক কাজী আনোয়ার হোসেনের সৃষ্ট কাহিনী-চরিত্র মাসুদ রানা পরতে । ভালো লাগে সমুদ্র সৈকতে এক বসে থাকতে, আর জীবন নিয়ে ভাবতে। আমি ভ্রমন প্রিয় মানুষ, সময় পেলেই মোবাইল ক্যামেরা হাতে ছুটে যাই দেশ বিদেশে। আমার ওয়েব ডিজাইন থেকে আয়ের বেশির ভাগই খরচ করি ঘুরে বেরাতে গিয়ে।

এম আর জান্নাত স্বপন বর্তমানে গাজিপুরে টেক্সটাইল এ কাজ করার পাশাপাশি কাজ করছেন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির জন্য একটি  বিশেষায়িত টেলিভিশন চ্যানেলে। কানাডা-বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে প্রস্তুতি নেয়া এই টেলিভিশনের নাম ওয়ার্ল্ড বাংলা চ্যানেল। সেখানে কাজ করছেন হেড অফ ওয়েব এন্ড সোসাল মিডিয়া হিসেবে। প্রবাসীদের জন্য নতুন এ বাংলা চ্যানেলটি প্রচারিত হবে কানাডার টরন্টো থেকে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের পরিচালনায়।

প্রবাসীদের সুখ-দু:খ, কৃতিত্ব, সফলতা, সমস্যা-সম্ভাবনা, বাংলা ঐতিহ্যসহ নানা বিষয় থাকবে এই টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান বিষয়। “সিঙ্গাপুর, দুবাই, লন্ডন, নিউইয়র্ক এবং টরন্টোতে স্থাপিত অফিস ষ্টুডিও থেকে তৈরি হবে অনুষ্ঠান ও সংবাদ । থাকবে সিলেট, চিটাগাং সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত অনুষ্ঠানও। প্রস্তুতির পর্যায়ে  থাকা টেলিভিশন চ্যানেলটি ইতিমধ্যে প্রবাসীদের নজর কারতে সক্ষম হয়েছে।

২০১১ সাল থেকে সম্পূর্ণ কমিউনিটি নির্ভর পজিটিভ নিউজ নিয়ে নিউজ পোর্টাল, কুড়িগ্রাম লাইভ ডট কম এর সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে আছেন। এর আগে ২০১০ সালের দিকে শুরু করেছিলেন কুড়িগ্রাম কমিউনিটি ফোরাম নামের একটা ওয়েব ডাইরেক্টরি সেখানে তুলে ধরা হতো কুড়িগ্রাম জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য , দর্শনীয় জায়গার ছবি ভিডিও সহ বর্ণনা। জেলার বিখ্যাত সব তথ্য । কুড়িগ্রাম আপনি কেন যাবেন, কি ভাবে যাবেন। গিয়ে কি দেখবেন । থাকবেন কোথায় দর্শনীয় যায়গার দূরত্ব । বাস কাউন্টার গুলোর ফোন নাম্বার । সকল জরুরী সেবা প্রতিষ্ঠান এর ঠিকানা । সহ যাবতীয় তথ্য পাওয়ায় যেতো এই ওয়েবসাইটে নিজের খেয়ে আর কত বনেরমেশ তাড়ানো যায়। তাই এক সময় অই প্রোজেক্ট টা বন্ধ করে দিতে হয়।

প্রফেশনালি ওয়েব ডিজাইন ডেভলপমেন্ট এর হাতেখড়ি ২০১২ সালে জুমলা সিএমএস দিয়ে পরবর্তীতে ওয়ার্ডপ্রেস এক্সপার্ট হিসেবে নিজের মেধার সাক্ষর রেখেছেন ওয়েব জগতে। দেশি বিদেশী ক্লাইণ্ট এর জন্য এ পর্যন্ত তৈরি করেছেন প্রায় ৫০০ এর উপর নান্দনিক সৃজনশীল ডিজাইনের ওয়েব সাইট। তার প্রতিষ্ঠান মেশতাড়ুয়া ওয়েব হোস্ট সলিউশন থেকে শুধু কি ওয়েব ডিজাইন সার্ভিস প্রভাইড করা হয় ? না । ডোমেইন এবং হোস্টিং  সার্ভিস ও দেয়া হয় এখান থেকে। এ বছরের শুরুতে মেশতাড়ুয়া ওয়েব হোস্ট সলিউশন এর নাম পালটিয়ে গ্রাহকদের আরও উন্নত সেবা দানের লক্ষ্য নতুন একটি ওয়েব সার্ভিস সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান গড়েছেন সেটির নাম ভালো হোস্টিং

ফ্রন্ট এন্ড ডেভলপার হিসেবে পারটাইম কাজ করছেন ভালো প্রচার নামের একটা প্রতিষ্ঠানে। স্পেশাল করস্পন্ডেন্ট হিসেবে কাজও করছেন কনাডিয়ান একটি বাংলা নিউজ পেপার দি প্রবাসী তে  । এখন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ / বি এস এস করছেন এতো কাজের পাশাপাশি। তিনি মনে করেন শিক্ষার কোন বিকল্প নাই।

ইচ্ছে থাকলে, সব করা সম্ভব, এই কথার উদাহরন এম আর জান্নাত স্বপন। তিনি নিজের কম্পিউটার না থাকার কারনে সাইবার ক্যাফে থেকে বসে কাজ শিখেছেন। যা শিখেছেন সব নিজে নিজে অনলাইনের সহযোগিতা নিয়ে। এক সময় সাইবার ক্যাফেতে বসেই করেছেন ৫০ টির মত ওয়েবসাইট।

তিনি বলেন, ২০০৩ সাল থেকে গাজীপুরে টেক্সটাইল মিলে চাকুরী করি। শখের ওয়েব ডিজাইনার। মূলত কাজ করি ওয়ার্ডপ্রেস ও জুমলা প্লাটফরমে। বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুরে। এক সময় লেখা পড়া থেমে যায়। সেই তখন থেকে একা পথ চলতে শেখা।

ঠেলাগাড়ি চালানো থেকে প্রোগ্রামিং, সব কাজেই দরকার একাগ্রতা, নিষ্ঠা এর কাজের প্রতি ভালবাসা। আসলে আমার জীবনে আমি অনেক কিছু হারিয়েছে শুধু এর পেছনে সময় দিতে যেয়ে। আরো কিছু যদি আমাকে হাড়াতেও হয় তবুও আমার আপত্তি নেই শুধু আমি আমার এই জগৎটি নিয়েই থাকতে চাই। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষটাই প্রথম ঘুরে দাড়ায়। সমুদ্রে একা ডুবতে যাওয়া মানুষটাই জানে তীরে ফেরার ব্যাকুলতা! আমি হতাশ নই, সংগ্রামী হয়ে আমার প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই। এখন প্রচণ্ড গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। গত এক বছরে জীবনের আমূল পরিবর্তন করে ফেলেছি। আগামী এক বছরেও আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাব।

আইটি খাতের এই মহানায়ক মনে করেন, যুদ্ধে তাকে জয়ী হতেই হবে। কারণ তিনি পরিশ্রম করতে জানেন। নিজের প্রতিটি মুহুর্তকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করছেন। টেক্সটাইলে চাকরি আর পড়াশুনার পাশাপাশি পেশাদার ফ্রিল্যান্সিং করছেন । চলছেন নিজের মতো করেই। তিনি দেশের অন্য দশজন তরুনের স্বপ্ন হতে পারেন। তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নেয়ার আছে অনেক কিছু। দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনুক, এটাই আমাদের কাম্য।

লিখেছেন: তাওহীদ হাসান, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *